পটয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের চারপাশে বড় বড় নদী থাকার কারণে এখানে বিদ্যুৎ আসাটা খানিকটা স্বপ্নের মতো ছিল। সেই স্বপ্ন এখন পূরন হবার অপেক্ষায় এখানকার প্রায় এক লক্ষ মানুষ সৌরবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল। চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বাসীর স্বপ্নপূরণে গত বছরে উপজেলা পরিষদে পল্লী বিদ্যুৎ এর উদ্যোগে গলাচিপা উপজেলার দুটি দ্বীপ ইউনিয়নে কিভাবে বিদ্যুৎ আনা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাহজাদা ও পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজামউদ্দিন মোল্লা বলেন, দ্বীপ অঞ্চলে প্রায় ১লাখ মানুষের বসবাস। এরা সকলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার কান্ডারী। দ্বীপ অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোকিত করায় ও বিদ্যুতের খুঁটি আসায় দ্বীপ অঞ্চলের জনগণের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহিন শাহ বলেন, উন্নয়নের সরকার বলতে আওয়ামীলীগ সরকারকেই বোঝায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় গলাচিপা দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ^াসে বিদ্যুতের খুঁটি পৌছে গেছে। দ্বীপ অঞ্চলে জনসাধারণের ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ বিষয় নিয়ে এমপি এসএম শাহজাদা বলেন, দুটি ইউনিয়নে বিদ্যুতের খুঁটি চলে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী “শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” কার্যক্রমকে সামনে রেখে মুজিববর্ষকে স্মরনীয় করতে বাংলাদেশ সহ গলাচিপা উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। গলাচিপা উপজেলার দুটি দ্বীপ ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে ইতিমধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ ও খুঁটি স্থাপনে কাজ শুরু হচ্ছে। সামনের মাস থেকে খুঁটি স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া।জানা গেছে, শনিবার বিদ্যুৎ সংযোগ খুঁটি নিয়ে একটি জাহাজ চরকাজল লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছায়। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দের জোয়ার। দীর্ঘদিনের কষ্টকে পিছনে ফেলে এবার তারা দেখবে আলোর মুখ সেই আনন্দে মুখরিত চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বাসী মানুষ। স্থানীয়রা জানান, আমরা চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বাসীর মানুষ সৌরবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল সূর্য উঠলে আমাদের ঘরে আলো জ্বলে। বেশি দিন ধরে আকাশে মেঘ থাকলে আমাদের থাকতে হয় অন্ধকারে। বিদ্যুতের সংযোগ খুঁটি দেখে আমরা একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস পাচ্ছি। ভোলা থেকে ইউনিয়নে চরকাজল-চরবিশ্বাসে সংযোগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মনোহর কুমার বিশ্বাস জানান। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একটি টিম গত বছর যায়গা পরিদর্শন করেছে। এখানে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের কাজ শেষ হলেই চলতি মাস থেকে সংযোগ দেয়া শুরু হবে। ২০২০ সালের মধ্যে এই দুই ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করব। পটুয়াখালীর গলাচিপায় দুর্গম দ্বীপ চরকাজল ও চরবিশ্বাস। সাগর ও নদী বেষ্টিত এ দুই দ্বীপে অনেক মানুষের বসবাস। বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও মৎস্য পেশার ওপর নির্ভরশীল। সম্ভাবনাময়ী এ জনপদে অর্থনীতি সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুইটি বাঁধা। একটি বিদ্যুৎ, আরেকটি যোগাযোগ। অবশেষে ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির একটি পূরণ হতে যাচ্ছে মুজিববর্ষেই বিদ্যুতের আলোয় রাঙাবে (আলোকিত) সেখানকার মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সরকারের এ অঙ্গীকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতেই (মুজিববর্ষ) বিদ্যুৎবিহীন এ জনপদে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পোঁছাবে। বেশিরভাগ মানুষ মৎস্য ও কৃষি পেশার সঙ্গে নিয়োজিত। কিন্তু সাগর আর নদী বেষ্টিত হওয়ায় সম্ভাবনাময়ী এ দুটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংযোগ না থাকায় সৌর সোলার বিদ্যুৎ সেবার কারণে স্বাভাবিক জীবন ধারায় তেমন বাঁধা না আসলেও অর্থনৈতিক বিস্তারে মারাত্মক প্রভাব ফেলছিল।